ডাব খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন।
ডাব খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে কমবেশি আমরা সবাই জানি।ডাবের পানিতে রয়েছে মানব শরীরের জন্য উপকারী অনেক গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টি উপাদান । এতে প্রচুর পরিমাণে মিনারেল থাকায় এই পানি পান করলে মুহূর্তেই শরীর সতেজ হয়ে যায়। তাই এটি অত্যান্ত উপকারী এবং এটি কৃতিমতাহীন ও পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া বিহীন একটি প্রাকৃতিক পানীয়।
আজকে আর্টিকেলটি ডাব খাওয়ার উপকারিতা এবং ডাবের সকল গুনাগুন নিয়ে আলোচনা করব।তাই বিস্তারিত জানতে হলে আমার আর্টিকেলটি সম্পূর্ণ মনোযোগ সহকারে পড়ুন আশা করি উপকৃত হবেন।
ভূমিকা
গরমকালে আমরা সাধারণত তৃষ্ণা মেটাতে ডাবের পানি পান করে থাকি ।কিন্তু ডাবের পানির সকল উপকারিতা সম্পর্কে আমরা অনেকেই জানিনা, শরীরের জন্য ডাবের পানির ভূমিকা অপরিসীম। তাই ডাবের পানিতে থাকা যে সকল পুষ্টি উপাদান রয়েছে বা যে সকল ভিটামিন রয়েছে সেগুলো সম্পর্কে নিচে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে ।
ডাব খাওয়ার উপকারিতা
ডাবের পানি অত্যন্ত সুস্বাদু। তাই ছোট বড় প্রায় সবাই পছন্দ করে। প্রাকৃতিকভাবে উৎপন্ন হওয়া এই পানিটির রয়েছে নানা উপকারিতা।
- বিভিন্ন খনিজ পদার্থের পরিপূর্ণ ডাব । ডাবের পানি ক্লান্ত শরীরে পানি শূন্যতা দূর করে এবং সতেজ রাখে এক কাপ ডাবের পানিতে আছে ৬০ ক্যালোরি বিদ্যমান।
- অতিরিক্ত গরমে আমাদের শরীরে ডিহাড্রেশন এবং ক্লান্তি বোধ হয়। তাই এ সকল সমস্যা এবং পানির ঘাটতি পূরণ করে ডাব এতে আছে কার্বোহাইড্রেট যা শরীরে এনার্জি বাড়ায়।
- ডাব আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে এবং দেহে ক্যালসিয়াম পটাশিয়ামের অভাব জনিত সমস্যা ও দূর করে।
- প্রসাবের বিভিন্ন সমস্যায় ডাবের পানি পানি উপকার পাওয়া যায়। এমনকি গ্লোকোজ স্যালাইন হিসেবেও ডাবের পানি ব্যবহৃত হয়।
খালি পেটে ডাবের পানির উপকারিতা
সকালে ডাবের পানি খেলে সেটা ঘুম থেকে উঠেই খালি পেটে খাওয়া জরুরী। ডাবের পানিতে লরিক অ্যাসিড, যা নানা ধরনের রোগের সঙ্গে লড়াই করার ক্ষমতা বাড়িয়ে তোলে। ডাবের পানি দিয়ে যদি সকাল শুরু করেন তাহলে সারাদিন শরীর সুস্থ এবং ফ্রেশ থাকবে। ডাবের পানিতে কম ক্যালোরি থাকায় এটি পাকস্থলীর জন্য সহনীয়।
এই পানি দ্রুত হজমে সহায়তা করে ও খাবার পর পেটে গ্যাস হতে দেয় না ।তাই প্রতিদিন খাবার আগে খালি পেটে ডাবের পানি পান করলে শরীর ভারসাম্য বজায় থাকে এবং রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকে এবং বিপাক প্রক্রিয়া উন্নত রাখে।
ডাবের পানির পুষ্টিগুণ
তৃষ্ণা মিটানোর পাশাপাশি নানা ধরনের উপকারী পুষ্টি উপাদানে ভরপুর ডাবের পানি । প্রতি,১০০ গ্রাম ডাবের পানিতে জলীয় অংশ ৯৫ গ্রাম, শর্করা ২.৪ গ্রাম ,পদার্থ ০.৩ গ্রাম , আমিষ ২.৩ গ্রাম , ক্যালসিয়াম
১৫ মিলিগ্রাম ,আয়রন ০.১ মিলিগ্রাম,ভিটামিন বি ১,ভিটামিন বি ২ , ৫মিলিগ্রাম ভিটামিন সি এবং খাদ্য শক্তি ২৩ কিলোক্যালরি থাকে।
তাই ডাবের পানি শরীরের জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ । ডাবের পানিতে থাকা সকল উপাদান আমাদের মানব দেহের নানাবিধ সমস্যা দূর করে থাকে তাই সুস্থ থাকতে ডাবের পানির কোন বিকল্প নেই এটি অনেক উপকারী এবং পুষ্টিগুণ সম্পন্ন প্রাকৃতিক পানীয়।
ডাবের পানি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে
ডাবের পানির মধ্যে কিছু অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল ও এন্টি ভাইরাস রাইবোফ্লোবিন,থিয়ামিন , এ সকল উপাদান থাকায় এই পানি ব্যাকটেরিয়া ও ভাইরাস মারতে অনেক কার্যকরী ভূমিকা রাখে। তাই প্রত্যেকদিন খাবারসহ অন্যান্য মাধ্যমে আমাদের শরীরে যেসব ব্যাকটেরিয়া ও ভাইরাস প্রবেশ করে সেগুলো মারার জন্য এক গ্লাস ডাবের পানি খাওয়া যেতে পারে ।
কারণ রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে ডাবের পানি অনেক ভালো কাজ করে। কারণ ডাবের পানিতে যে সকল উপাদান রয়েছে সেগুলো শরীরে থাকা ব্যাকটেরিয়া বা ভাইরাস এর বিরুদ্ধে লড়াই করে শরীর সুস্থ রাখে। তাই সুস্থ সবল শরীরের জন্য ডাবের পানি খাওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
শরীরে পানির ঘাটতি মেটাতে ডাবের পানি
ডাবের পানি শরীরের প্রবেশ করা মাত্র পানির ঘাটতি মিটতে শুরু করে । সেই সঙ্গে এতে থাকা ইলেক্ট্রোলাইট কম্পোজিশন, ডায়রিয়া , বমি , এবং অতিরিক্ত ঘামের পর শরীরের ভিতরে খনিজের ঘাটতি মেটাতেও বিশেষ ভূমিকা পালন করে। বিশেষ করে গরমকালে আমাদের শরীরে পানি স্বল্পতা দেখা দেয় এতে করে শরীর দুর্বল হয়ে যায় তাই এ সমস্যা থেকে পরিত্রাণ পেতে।
ডাবের পানি খাওয়া জরুরী এটি শরীরে নানাবিধ সমস্যা সমাধান করে থাকে এবং শরীরকে সতেজ এবং প্রাণবন্ত করে তোলে তাই শরীরে পানির ঘাটতি মেটাতে ডাবের কোন জুড়ি নেই।
গর্ভাবস্থায় ডাবের পানি খাওয়ার উপকারিতা
গর্ভবতী নারীদের নিজেদের ও সন্তানের স্বাস্থ্য ধরে রাখতে মনোযোগী হতে হয় ফলে খাওয়া-দাওয়ার ক্ষেত্রে তাদের খানিকটা সচেতন থাকতে হয় এ কারণে গর্ভাবস্থায় নারীদের ডায়েটে একাধিক বিষয়কে শামিল করা হয় তার মধ্যে অন্যতম হলো ডাবের পানি,। কারণ এতে রয়েছে ক্যালসিয়াম ,ম্যাগনেসিয়াম ক্লোরাইড। এটি খেলে শরীরে ইলেকট্রোলাইট, ও তরল পদার্থের পরিমাণ তৈরি হয়।
তাই বলা হয় গর্ভবতী নারীদের গর্ভধারণের তৃতীয় মাস থেকেই উচিত ডাবের পানি খাওয়া। এ সময় পুষ্টির প্রয়োজনীয়তা সবচেয়ে বেশি এতে মা ও শিশু দুজনেই পুষ্টিগুনে সমৃদ্ধ হয়।
ডাবের পানি ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রণ করে
ডাবের পানিতে থাকা এমাইনো এসিড এবং ডায়াটারি ফাইবার ইনসুলিন এর কর্মক্ষমতা বাড়িয়ে দেয়। ফলে স্বাভাবিকভাবে ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রণে চলে আসে। তাই এ কারণে প্রতিদিনের ডায়েটে ডাককে অন্তর্ভুক্ত করার পরামর্শ দিয়ে থাকেন চিকিৎসকরা।
ডাবের পানি মাথা ব্যথা দূর করে
ডিহাইড্রেশনের কারণে মাথা ব্যথা বা মাইগ্রেনর অ্যাটাক হওয়ার মত ঘটনা ঘটলে দ্রুত এক গ্লাস ডাবের পানি খেয়ে নিবেন। এমনটা করলে দেখবেন নিমিষেই মাথা ব্যথা কমে যাবে । আসলে এই প্রাকৃতিক উপাদানটিতে উপস্থিত ম্যাগনেসিয়াম , পাইরিডোক্সিন, তাই এই ধরনের শারীরিক সমস্যার চিকিৎসায় বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে ডাবের পানি।
ত্বক সুন্দর রাখতে ডাবের পানি
ডাবের পানি ত্বকের জন্য খুবই উপকারী। একটি ডাবের প্রায় ৯৪ শতাংশই পানি থাকে। ডাবের পানি এক ধরনের ন্যাচারাল টোনার। এটি ত্বকের পোরস ছোট করে আনে, ত্বকের অতিরিক্ত তেল দূর করে এবং স্কিনকে মশ্চূরাইজ করে , স্কিনের পিএইচ ব্যালেন্স রাখে। ডাবের পানিতে রয়েছে অ্যান্টিফাঙ্গাল ও এন্টিব্যাকটেরিয়াল গুণ।
এটি ত্বকের ইনফেকশন এর জন্য ও ভাল কাজ করে তাই বলা যায় ডাবের পানি শুধু রূপচর্চায় না সকল ধরনের সমস্যার কাজ করে থাকে ।
ডাবের পানি হজম শক্তি বৃদ্ধি এবং বদহজম দূর করে
হজম সমস্যা সমাধানে ডাবের পানি অনেক ভালো কাজ করে ।ডাবের পানি পান করলে হজম শক্তি বৃদ্ধিসহ একই সাথে বদহজম ও দূর হয়। ডাবের পানি গ্যাস্ট্রিক , আলসার , কোলাইটিস , ডিসেন্ট্রি , এবং পাইলসের সমস্যা দূরীকরণেও সাহায্য করে।
ডাবের পানি সংরক্ষণের উপায়
ডাবের পানিতে নানা ধরনের পুষ্টি উপাদান থাকে। তাই ডাবের পানি সুস্বাস্থ্য রক্ষায় অত্যন্ত উপকারী ডাবের পানি মূলত গরমকালে বেশি খাওয়া হয়। এ সময় অতিরিক্ত গরমের ফলে শরীরে ক্লান্তি এবং অবসাদ দেখা দেয় যার ফলে এই সময় সবাই ডাবের পানি খেয়ে থাকি। কারণ আমরা জানি ডাবের পানি আমাদের শরীরের জন্য কতটা উপকারী।
তাই এই ঋতুতে হাতের নাগালেই ডাব পাওয়া যায়। নিয়মিত খাওয়া ও ব্যবহারের জন্য ডাবের পানি ফ্রিজেও সংরক্ষণ করতে পারেন দুই থেকে তিন দিন।
ত্বকের বিভিন্ন সমস্যায় ডাবের পানি ব্যবহারের নিয়ম
- ২ টেবিল চামচ মুলতানি মাটির সাথে পরিমাণ মতো ডাবের পানি মিশিয়ে একটি পেস্ট তৈরি করুন। এই মিশ্রণটি ত্বকে 20 মিনিট রেখে ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন, এটি রোদে পোড়া দাগ দূর করে এবং ত্বক উজ্জ্বল করে।
- ত্বকে ব্রণের সমস্যা থাকলে প্রতিদিন ডাবের পানি দিয়ে মুখ ধোয়ার অভ্যাস করার চেষ্টা করুন এটি ব্রণের সমস্যার স্থায়ী সমাধান। এমনকি ডাবের পানি দিয়ে ফেইস মাস্ক ও তৈরি করতে পারেন ২৫ গ্রাম হলুদ বাটার সাথে এক গ্লাস ডাবের পানি মিশিয়ে রাখুন সারারাত। সকালে এতে তিন চা চামচ চন্দন গুঁড়ো মেশাতে হবে তারপর। এই মিশ্রণটি ফ্রিজে রেখে দেন তিন দিন। ৩ দিন পর এই মিশ্রণটি ব্যবহার করুন সপ্তাহে তিন দিন ব্যবহার করুন ত্বকের ব্রণের দাগ দ্রুত দূর হবে।
ডাবের পানি খেলে কিডনির সমস্যা দূর হয়
প্রচুর মাত্রায় পটাশিয়াম এবং ম্যাগনেসিয়াম থাকার কারণে ডাবের পানি কিডনির কর্মক্ষমতা বাড়াতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে । এটি কিডনিতে পাথর প্রতিরোধ করে ,সেই সাথে উপস্থিত টক্সিন উপাদানটি ইউরিন এর সঙ্গে বের করে নানাবিধ জটিল রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কাও কমায়।
ডাবের পানি ওজন কমাতে সাহায্য করে
ডাবের পানিতে থাকা বেশ কিছু উপকারী এ্যান্ড লাইন হজম ক্ষমতা বাড়ানোর পাশাপাশি মেটাবলিজম এর উন্নতিতে ও সাহায্য করে থাকে ফলে খাবার খাওয়া মাত্র এত ভালোভাবে হজম হয়ে যায় যে শরীরের অন্ত্রে হজম না হওয়া খাবার মেদ হিসেবে জমার সুযোগ কি পায় না যার ফলে ওজন কমতে শুরু করে।
ডাবের পানি শরীরের লবণের মাত্রা ঠিক রাখে যার ফলে শরীরে ওজন কমাতে অনেক ভালো কাজ করে থাকে।
লেখকের মন্তব্য
ডাবের সকল উপকারিতা সম্পর্কে আশা করি ভালো ভাবে জানতে পেরেছেন। ডাবের পানি খাওয়া শরীরের জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ । এটি প্রাকৃতিক পানীয় হওয়ার ফলে এর তেমন কোন সাইড ইফেক্ট নাই বললেই চলে এটি নিয়মমাফিক ভাবে পান করলে কোন অসুবিধা হবে না।
আশা করি আমার আর্টিকেলটি আপনাদের ভালো লেগেছে যদি ভালো লেগে থাকে তাহলে অবশ্যই বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করবেন এবং কমেন্ট করেন ।
এক্সক্লসিভ এ এস এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url