থাইরয়েড কি? থাইরয়েড এর কারন, লক্ষণ ও চিকিৎসার বিস্তারিত আলোচনা
থাইরয়েড গ্রন্থি বা থাইরয়েড হল দুইটি লোক দ্বারা গঠিত একটি অন্তঃক্ষরা গ্রন্থি যারা অবস্থান গ্রীবাতে। দেশের শতকরা ২০ ভাগ মানুষ থাইরয়েডের সমস্যায় ভুগছেন। এটি হরমোনের ঘাটতি বা আধিক্যর কারণে ব্যাপক শরীরবৃত্তীয় পরিবর্তন ঘটে। থাইরয়েড সমস্যার অনেক গুলো প্রকারভেদ রয়েছে এটি জন্য অনেক বিপদজক।
এই আর্টিকেলটিতে থাইরয়েড সমস্যা নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে বিস্তারিত জানতে আমার আর্টিকেলটি সম্পূর্ণ মনোযোগ সহকারে পড়ুন আশা করি উপকৃত হবেন।
ভূমিকা
বর্তমানে বেশিরভাগ মানুষেরই থাইরয়েড সমস্যা রয়েছে এটি মানুষের বুদ্ধি, বিকাশ শারীরিক বিপাকীয় ক্রিয়া ও প্রতিক্রিয়া সাধনে থাইরয়েডের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। এটি শরীরের জন্য ভালো তবে এর মাত্রা যদি স্বাভাবিকের থেকে কম বা বেশি হয়ে যায় তাহলে শরীরে অনেক ধরনের ইফেক্ট করে । এটি মূলত হরমোনজনিত কারণে হয়ে থাকে।
তাই বলা যায় যে , বর্তমানে ডায়াবেটিক্স রোগের পরেই থাইরয়েড রোগের অবস্থান। নিচে থাইরয়েডের সকল কারণ লক্ষণ ও প্রতিকার সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে।
থাইরয়েড কি
গলার সামনের দিকে অবস্থিত থাইরয়েড গ্রন্থি শরীরে থাইরয়েড হরমোনের প্রধান উৎস। এটি শ্বাসনালীর চারপাশে আবৃত থাকে। এর আকৃতি অনেকটা প্রজাপতির মতো, এই গ্রন্থির কাজ মূলত আমাদের শরীরে অত্যাবশকীয় হরমোন উৎপাদন করা। এটি বিপাকের হাড়, হৃদপিন্ডের কর্ম ক্ষমতা হজমের প্রক্রিয়া পেশী ও হাড়ের স্বাস্থ্য ভালো রাখে।
কিন্তু এই থাইরয়েড হরমোনের আবার একটা নির্দিষ্ট মাত্রা আছে। এটি নির্দিষ্ট মাত্রার চাইতে কম বা বেশি হরমোন উৎপাদিত হলে শরীরের ওপর বিরূপ প্রভাব পড়তে পারে । যেমন থাইরয়েড এর মাত্রা যদি বেড়ে যায় তাহলে শরীরের প্রতিটি কোষ, টিস্যু ও অঙ্গের কার্যকারিতায় ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলে। যার ফলে শরীরে অনেক সমস্যা দেখা দেয়।
থাইরয়েড রোগের কারণ
নানা কারণে থাইরয়েডের সমস্যা হতে পারে। এটি হরমোন উৎপাদনে আয়োডিনের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। আয়োডিন কম থাকলে থাইরয়েড হরমোন কম উৎপন্ন হবে অথবা থাইরয়েড ফুলে যাবে এই ফুলে যাওয়াকেই বলা হয় গলগন্ড রোগ বা থাইরয়েড।।আবার জন্মগতভাবে ও থাইরয়েড গ্রন্থির ত্রুটিতে সমস্যা দেখা দেয়।
কারো যদি থাইরয়েডের সমস্যা থাকে তাহলে তার সন্তানদেরও এই সমস্যা হতে পারে। শরীরের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থার ত্রুটি এবং অ্যান্টিবডি তৈরির কারণে থাইরয়েড সমস্যা দেখা দেয়।
পুরুষদের থাইরয়েড এর লক্ষণ
- গলার ভয়েস বক্সের দুই দিকে ফোলা পিন্ডের মতো অনুভব করা
- হতাশা, নার্ভাস অনুভব করা ডিপ্রেশন অথবা মেজাজ পরিবর্তন হাওয়া
- অনেকক্ষণ ধরে গরম অথবা শীত অনুভব করা
- বেশি ক্লান্তি অনুভব করা
- হঠাৎ ওজন গ্রাস বা বৃদ্ধি হওয়া ইত্যাদি
মহিলাদের থাইরয়েডের লক্ষণ
- ক্লান্তিবোধ করা
- মহিলাদের ঘন ঘন এবং বেশি পরিমাণে পিরিয়ড হওয়া
- শুষ্ক ও মোটা চুল থাকা
- কর্কশ কণ্ঠস্বর
- ঠান্ডা তাপমাত্রায় অসহিষ্ণুতা অনুভব করা
- এবং ওজন বেড়ে যাওয়া
থাইরয়েড রোগের প্রকারভেদ
থাইরয়ে ড অন্য ধরনের হয়ে থাকে তার মধ্যে কয়েকটি যেমন,
- হাইপারথাইরয়েডিজমঃ হাইপারথাইরয়েডিজম গ্রেভস রোগের দিকে প্রচলিত করতে পারে, যার অনেকগুলি লক্ষণ রয়েছে যেমন বেশি ঘাম হওয়া,অ্যারিথমিয়া, ওজন হ্রাস, প্রসারিত চোখ এবং নার্ভাসনেস
- থাইরয়েড টিউমারঃ থাইরয়েড নডিউলস এবং অ্যাডেনোমাস , ছোট ক্যান্সার হীন বৃদ্ধি , কোষের স্থানে শুরু হয় যা থাইরয়েড গ্রন্থির অভ্যন্তরীণ পৃষ্ঠকে রেখা দেয়। এখনো মা নিজেই থাইরয়েড হরমোন নিঃসরণ করে। থাইরয়েড অ্যাডেনোমা চিকিৎসার মধ্যে অতি সক্রিয় নডিউল অপসারণের জন্য অস্ত্র পাচারের অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে।
- থাইরয়েড ক্যান্সারঃ যাদের মাথা, ঘাড় ,বা বুকে বিকিরন বা রেডিয়েশন দেওয়া আছে তাদের মধ্যে থাইরয়েড ক্যান্সার বেশি দেখা যায়।
- হাশিমোটো- থাইরয়েডাইটিসঃ হাশিমোটো-এর থাইরয়েডাইটিস একটি অটোইমিউন ডিস অর্ডার , গ্রন্থির প্রদাহ এটি গলগন্ড রোগ।
- হাইপোথাইরয়েডিজমঃ হাইপোথাইরয়েডিজোমের লক্ষণগুলির মধ্যে, ওজন বৃদ্ধি, বিষন্নতা , অস্বাভাবিক হাড়ের বিকাশ, স্থবির বৃদ্ধি ইত্যাদি অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে। এর সাধারণ কারণ হলো অটোইমিউন। এন্টিবাডির উৎপাদন যা থাইরয়েড গ্রন্থটি আক্রমণ করে, ইত্যাদি ।
থাইরয়েড রোগের চিকিৎসা
থাইরয়েড চিকিৎসা সাধারণত ভিন্ন ভিন্ন যেমন থাইরয়েড একরকম হয় না তাই এর আকার প্রকার এর ওপর নির্ভর করে এর চিকিৎসা। তবে যদি থাইরয়েড ক্যান্সার হয় তাহলে ঘাবড়ে না গিয়ে অতি দ্রুত বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। আর যদি থাইরয়েড ক্যান্সার না হয়ে থাকে তাহলে থাইরয়েড রোগের চিকিৎসা বা সার্জারি প্রায়ই সফল হয়।
থাইরয়েড কমানোর ঘরোয়া উপায়
- আয়োডিন সমৃদ্ধ খাবারগুলো হল-ডিম, পনির, লবন,ও দুধ।
- সেলেনিয়াম সমৃদ্ধ খাবার হল-টুনা ,মুরগি,ওটমিল, বাদামি চাল, ডিম
- জিঙ্ক
থাইরয়েড সমস্যা যেসব খাবার এড়িয়ে চলতে হবে
থাইরয়েড সমস্যাই যেসব খাবার এড়িয়ে চলতে হবে,তা হলো যেসকল খাবারে গাইট্রজেন থাকতে পারে আবার প্রক্রিয়াজাত খাবার বা প্রসেসড ফুড খাওয়াও কমিয়ে আনতে হবে।থাইরয়েড সমস্যা থাকলে কেক, কুকিজ,চিপস, সয়া দুধ, পীচ, নাশপাতি,কফি,গ্রিন টি এ্যালকোহল এ ধরনের খাবার এড়িয়ে চলতে হবে।
থাইরয়েড সমস্যায় কোন কোন ফল বেশি উপকারী
- কমলাঃ ভিটামিন সি এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ কমলা ফ্রি র্যাডিকেলের ক্ষতি থেকে কষগুলোকে রক্ষা করে। এটি থাইরয়েড গ্রন্থিতে প্রধান সৃষ্টি করে এবং কার্যকরী থাকে প্রভাবিত করতে পারে। কারণ কমলা তে থাকা ভিটামিন সি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় ।তাই থাইরয়েড জনিত রোগ নিয়ন্ত্রণ করে থাকে।
- আপেলঃ আপেল স্বাস্থ্যকর খাবারের মধ্যে একটি বিশ্বব্যাপী বেশ জনপ্রিয় ফল। আপেল রক্তে সরকারের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখে এবং থাইরয়েড গ্রন্ থেকেও কর্মকম অবস্থায় রাখতে সাহায্য করে। আপেল কোলেস্টেরলের মাত্রা কমায় এবং ডায়াবেটিস থেকে দূরে রাখে। তাই থাইরয়েড রোগেও আপেল অনেক ভালো কাজ করে।
- আনারসঃ আনারস রয়েছে প্রচুর ভিটামিন সি এবং এবং এই ফলে রয়েছে ম্যাঙ্গানিজ, নামক খনিজ উপাদান, যা দেহের শক্তি বাড়ায়। আনারস দেহের গ্ল্যান্ডকে নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে। এর পাশাপাশি থাইরয়েড গ্রন্থির স্ফিত হওয়া প্রতিরোধ করে।
থাইরয়েড এর নরমাল লেবেল কত
সাধারণত থাইরয়েড হরমোন বলতে ,ট্রাই আয়োডোথাইরোনিন বা (T3) এবং থাইরক্সিন বা (T4) কে বুঝাই সাধারণত থাইরয়েড এর স্বাভাবিক মাত্রা ১০ থাকলে আমরা তাকে নরমাল বলে মনে করি। ১০ বা এর নিচে থাইরয়েডের মাত্রা থাকলে সেই ক্ষেত্রে ওষুধের প্রয়োজন হয় না।
লেখক এর মন্তব্য
বর্তমানে থাইরয়েড সমস্যা অনেক বেড়ে চলেছে এ সমস্যা মেয়েদের ক্ষেত্রে বেশি দেখা দেয়। তাই থাইরয়েড এর লক্ষণ দেখা দিলেই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরী কারণ এটি অল্প থেকে মারাত্মক আকার ধারণ করতে পারে।
আশা করি থাইরয়েড সম্পর্কে ভালোভাবে বুঝতে পেরেছেন তাই যদি আর্টিকেলটি ভালো লেগে থাকে তাহলে অবশ্যই বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করবেন এবং কমেন্ট করে জানাবেন।
এক্সক্লসিভ এ এস এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url