আঙ্গুর ফলের উপকারিতা ও অপকারিতা জানুন
আঙ্গুর ফলের উপকারিতা ও অপকারিতা দুইটি দিকই রয়েছে । আঙ্গুর ফল আমাদের অতি পরিচিত একটি সুস্বাদু ফল এই ফল পছন্দ করেন না এমন মানুষ একটাও পাওয়া যাবে না। এই ফলের নানা খাদ্য ও ভেষজ গুণ রয়েছে যা আপনারা অনেকেই জানেন না। আবার আঙ্গুর ফলের কিছু অপকারিতাও রয়েছে।
তাই চলুন আজ আমরা জানবো আঙ্গুর ফলের উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে এবং আঙ্গুল ফল কয় ধরনের ও কি কি এ সকল বিষয় ছাড়াও আরো অনেক জানা অজানা তথ্য জানতে আর্টিকেলটি সহকারে পড়ুন।
ভূমিকা
আঙ্গুর ফলে যে সকল উপাদান বিদ্যমান রয়েছে সেগুলো আমাদের শরীর ও স্বাস্থ্যর জন্য অনেক ভালো। আজ আঙ্গুর ফলের উপকারিতা এবং অপকারিতা দুইটি দিক সম্পর্কে বিস্তারিত জানবো। আঙ্গুর ফলের এমন কিছু গুণ রয়েছে যা অনেক বেশি পুষ্টিগুণ । আঙ্গুর খেলে শরীরে নানা সমস্যা দূর হয় এর পাশাপাশি আরও অনেক অজানা তথ্য নিয়ে নিচে বিস্তারিত আলোচনা
আঙ্গুর ফলের উপকারিতা ও অপকারিতা
আঙ্গুর ফল নানা গুনে গুণান্বিত এটি একটি বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয় ফল বললেই চলে। তবে আঙ্গুর ফল যদি আপনার পছন্দ হয়ে থাকে তাহলে অবশ্যই আঙ্গুর ফল সম্পর্কে জানা দরকার না জেনে কোন কিছুই গ্রহণ করা উচিত নয়। কারণ উপকারিতার পাশাপাশি অপকারিতাও রয়েছে ।
তাই আমাদের জানা উচিত উপকারী দিক গুলো কি কি এবং অপকারী দিক কি কি চলুন জেনে নিই।
আঙ্গুর ফলের উপকারিতাঃ
- আঙ্গুর প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টি-অক্সিডেন্টে ভরপুর যা আমাদের শরীরে নানা ধরনের কাজে লাগে।
- আঙ্গুর ত্বকের বিভিন্ন সমস্যার সমাধান করতে এবং ত্বকের তারুন্য বজায় রাখতে অনেক ভালো কাজ করে।
- আঙ্গুরে প্রচুর পরিমাণ পটাশিয়াম রয়েছে, এ পটাশিয়াম শরীরে নানা রকম উপকার করে থাকে এর
- ফলে হার্টের সমস্যার আশঙ্কা অনেকটাই কমে যায়।
- আঙ্গুর চোখ ভালো রাখতে কাজ করে, এর কারণ হলো রেটিনায় প্রটেক্টিভ প্রোটিনের মাত্রা বাড়ায় আঙ্গুর তাই নিয়মিত আঙ্গুর খেলে চোখ ভালো থাকে ।
- আঙ্গুর ফল মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি করে কয়েকটি গবেষণায় পাওয়া গেছে, রেসভারেট্রল মস্তিষ্কের রক্ত প্রবাহ বাড়াতে কাজ করে। তাই যাদের স্মৃতিশক্তি জনিত সমস্যা রয়েছে তাদের নিয়মিত আঙ্গুর খাওয়া তাদের জন্য দারুন উপকারী।
- আঙ্গুর ফলে টরোস্টেলবেন নামক এক এক ধরনের যৌগ যা রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা কমায়।
- আঙ্গুর ফলের গুনাগুন গুলো মাথা ব্যাথা দূর করতে অনেক সাহায্য করে। এক্ষেত্রে নিয়মিত আঙ্গুল ফেলে মাথাব্যথা দূর করতে সাহায্য করে।তাই যাদের কোনদিন ধরে মাথা ব্যথা সমস্যা রয়েছে তাদের জন্য আঙ্গুর ফল খাওয়া অনেক গুরুত্বপূর্ণ।
আঙ্গুর ফলের অপকারিতাঃ
- অতিরিক্ত আঙ্গুর খাওয়ার ফলে শরীরে গ্লোকোজের মাত্রা বেড়ে যায়। আর এই গ্লূকোজ আমাদের শরীরের জন্য ভালো নয়।
- অতিরিক্ত আঙ্গুর খাওয়ার ফলে এলার্জি হতে পারে।যাদেরক এই সমস্যা রয়েছে তাদের আঙ্গুর এড়িয়ে চলায় উচিত।
- অতিরিক্ত আঙ্গুর খাওয়ার ফলে শ্বাসকষ্ট হতে পারে।
- অতিরিক্ত আঙ্গুর খেলে ওজন বৃদ্ধি হতে পারে।
- গ্যাসের সমস্যা এখন প্রায় সবাই ভোগেন, তাই গ্যাসের সমস্যার একটি কারণ আঙ্গুরও হতে পারে।
আঙ্গুর এর পুষ্টিগুণ
আঙ্গুর অত্যন্ত সুস্বাদু ও পুষ্টিকর একটি ফল। যা স্বাস্থ্যের জন্য অনেক ভালো। ছোট এ রসালো ফলটিতে আছে প্রচুর পরিমাণে পুষ্টিগুণ, যেমন অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট খনিজ ও ভিটামিন থায়ামিন, রাইবোফ্লাভিন এবং আরো রয়েছে নানা ধরনের পুষ্টি উপাদান যা স্বাস্থ্য ঠিক রাখার জন্য অনেক উপকারী । এই ফলে আছে নানা খাদ্য ও ভেষজ গুণ।
- আঙ্গুরে উপস্থিত রিজভেরাট্রল অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে যা আমাদের শরীরে ক্যান্সারের কোষ গঠন করতে বাধা প্রদান করে।
- প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় ছুটা আঙ্গুর রাখলে দেহের কোলেস্ট্রল ও হৃদপিন্ডের সুস্থতা নিয়ন্ত্রণ রাখা যায়।
- আঙ্গুরে উপস্থিত ভিটামিন সি ও মিনারেল এন্টিঅক্সিডেন্ট থাকায় আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে বিশেষভাবে সহায়ক।
- আঙ্গুর নিয়মিত খেলে বদহজম দূর হয় এবং অগ্নিমন্দা দূর করতেও আঙ্গুর অনেক বেশি কার্যকরী।
- যাদের রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা কম তারা দৈনিক খাদ্য তালিকায় আঙ্গুর রাখলে এর উপস্থিত আয়রন এবং অনন্য প্রয়োজনীয় মিনারেল রক্তের হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বৃদ্ধিতে সাহায্য করবে।
লাল আঙ্গুর খাওয়ার উপকারিতা
ফ্ল্যাভোনয়েড ফলি ফেনাল পলিফেনল নামক অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে যা রক্তনালী গুলিকে শিথিল করে এবং হৃদপিন্ডের পেশীতে যেকোনো ধরনের প্রদান কমায় এতে হার্ট অ্যাটাক বা স্ট্রোকের ঝুঁকি অনেকটাই কমে যায় লাল আঙ্গুরে পর্যাপ্ত পরিমাণে কার্বোহাইড্রেট রয়েছে , তা সত্ত্বেও এটি রক্তে শর্করা বাড়ায় না বরং কমায়। তাই লাল আঙ্গুর শরীরের জন্য অনেক উপকারী।
আঙ্গুর ফল খাওয়ার সঠিক সময়
ফল সকালে খালি পেটে খাওয়া অনেক বেশি উপকারী কিন্তু সব ফলের ক্ষেত্রে নয়। যেমন টক জাতীয় ফল, আঙ্গুর আমলকি লেবু কমলা মালটা, এ সকল ফল টক হওয়ার কারণে খালি পেটে খেলে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা হওয়ার সম্ভাবনা থাকে । তাই যেহেতু আঙ্গুর ফল টক জাতীয় সে ক্ষেত্রে সকল নাস্তার পরে বা দুপুরের মাঝামাঝি সময়ে , এবং বিকেলে ও খাওয়া যেতে পারে।
প্রতিদিন কতটুকু আঙ্গুর খাওয়া যাবে
আঙ্গুর নিয়মিত খেলে বিভিন্ন ধরনের রোগ এড়ানো সম্ভব হয়। আঙ্গুর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা এতটাই বাড়িয়ে তোলে যে ছোটখাটো রোগ গুলো শরীরের ধারের কাছে ঘেষতে পারে না। তাই গবেষণায় দেখা গেছে প্রতিদিন ৬০টি করে আঙ্গুর খাওয়া যাবে ।
চুলের যত্নে আঙ্গুর
চুল একটু অযত্ন পেলেই খুশিতে ভরে যায়। চুলের আগা ফেটে গিয়ে রুক্ষ হয়ে পড়ে এবং ধুশুর রঙের হয়ে যায় কখনো কখনো। সবশেষে চুল ঝরতে থা। এ সকল সমস্যা এড়াতে খেতে পারেন আঙ্গুর। শুধু চুল ভালই থাকবে না, মাথায় নতুন চুলও গজাবে তাই সবারই দিনে একবার হলেও আঙ্গুর খাওয়া উচিত।
আঙ্গুর দিয়ে কিসমিস তৈরি করার নিয়ম
বলক ওঠা গরম পানিতে ১ কেজি আঙ্গুর দিয়ে দিন। এবার আবারো বলক আসা পর্যন্ত অপেক্ষা করুন। বল ওঠার সাথে সাথেই আঙ্গুর গুলো ভেসে যাবে। এতে আঙ্গুর গুলোর মধ্যে ফাটল দেখা দিবে । এই পর্যায়ে চুলা বন্ধ করে আঙ্গুর গুলো উঠিয়ে নিয়ে চালনির মধ্যে ভালো করে পানি ঝরিয়ে নিতে হবে।
এবার আঙ্গুর গুলো শুকিয়ে কিসমিস তৈরির পালা, সেজন্য বড় ছিদ্রওয়ালা একটি ঝুড়ি বা চালুনির ওপরে পাতলা সুতি কাপড় বিছিয়ে নিতে হবে। কাপড়ের ওপরে ফাঁকা ফাঁকা করে আঙ্গুর রেখে কড়া রোদে দুদিন পর্যন্ত শুকাতে হবে এর মধ্যে তৈরি হয়ে যাবে কিসমিস। যদি সামান্য ভেজা থাকে তাহলে ফ্যানের বাতাসে শুকিয়ে নিন।
আঙ্গুর কোথায় বেশি উৎপন্ন হয়
আঙ্গুর বিদেশি ফল হলেও জনপ্রিয় এই ফলটি চাষে সফল হয়েছেন বাংলাদেশের ঝিনাইদহ জেলার মহেশপুর উপজেলার একজন চাষী। চীন , যুক্তরাষ্ট্র , ইতালি , ইরান , দক্ষিণ আফ্রিকার মত দেশগুলোতেই বিশ্বের সবচেয়ে বেশি উৎপন্ন হলেও ফলটি প্রায় সারা বিশ্বেই জনপ্রিয়।
আঙ্গুরের জাত
আঙ্গুরের বিভিন্ন ধরনের জাত রয়েছে। এসব জাতের মধ্যে উন্নত মানের জাত হল,থস্পসন (বীজশূন্য), পুসা (বীজশূন্য), বিউটি (বীজশূন্য) পারলটে , চিমা , কালি সাহেবি , হোয়াইট, আর্লি মাস্কাট , মালাগা (থাই) ইত্যাদি আরো বিভিন্ন প্রজাতির আঙ্গুরের জাত রয়েছে। তবে বাংলাদেশের আবহাওয়ার উপযোগী জাতের নাম ''পার্পেল''।
লেখক এর মন্তব্য
আঙ্গুর ফলের উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে আজ আলোচনা করেছি। আঙ্গুর ফলফল আমাদের শরীরের জন্য অনেক উপকারী। এতে থাকা সকল ধরনের ভিটামিন আমাদের শরীরে নানান রোগের বিরুদ্ধে লড়াই করে এবং শরীর সুস্থ রাখে। ঠিক তেমনি এর কিছু পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া রয়েছে যা পড়ে বুঝতে পেরেছেন।
সকল জিনিসের দুটি দিক রয়েছে তাই আমাদের উপকারিতা এবং অপকারিতা সকল দিক খেয়াল করে যেকোনো খাবার খাওয়া উচিত তাহলে। শরীরে কোন প্রকার ইফেক্ট হবে না। সর্বশেষ কথা সব জিনিসই নিয়ম মেনে পরিমিত খেতে হবে ।
আশা করি আঙ্গুর ফলের সকল দিক ভালোভাবে বুঝতে পেরেছেন তাই আজকের আর্টিকেলটি ভালো লেগে থাকলে অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবেন এবং বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করবেন।
এক্সক্লসিভ এ এস এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url